সীমা ব্যানার্জী-রায়ের কবিতা--
এক অপ্সরা
দূরে এক সত্য অপ্সরা
ওকে চলো হৃদয়ে বসাই
কেন যে চক্কর দেয় স্বপ্নের জৌলুসে
স্থির ও স্বচ্ছন্দ টানে আজন্মসম্প্রতি :
এই চেয়ে থাকা, ভালোবাসা, বিশুদ্ধ প্রতীকে
চলো কাছে রাখি, একটি গ্রন্থের মতো
আমি জানি যা লিখি, সবই উত্তরভরা চিঠি
জানো তুমি তোমার মতো আমিও একাকী :
কখনও যাবো না কাছে, শুধু একটিবার
আঁখির পলক যেন না পড়ে, বার বার
অতিথি তুমি, কেন জেগে ওঠো অকস্মাৎ
হে প্রাণপ্রিয়, আবার দেখতে চাই এমনি দৈবাৎ
মাথুর দাসের কবিতা—
যারা এখনও বঝেনি
যারা এখনও বোঝেনি
তাদেরকে বোঝাও,
কথায়
সতর্কীকরণে নির্দেশিকায়
যারা এখনও বোঝেনি
তাদেরকে বোঝাও,
কানটি মলে তাদেরকে
বোঝাও,
বোঝাও যে যা অদৃশ্য
তা দৃশ্যমানের চেয়েও
বেশিগুণ ভয়ঙ্কর ;
জেগে-ঘুমোনো
মানুষগুলির
চোখের পাতা দু'ফাঁক করে খুলে দেখাও
চারপাশের
মৃত্যুমিছিল
তার দরজা-গোড়ায় এসে
গেছে,
এখন বাইরে বেরিয়ে
উৎসব-মোচ্ছবের সময় নয় ;
দরজার খিলটি আঁটো জোরে ।
হিমাদ্রি নাথ ব্যানার্জ্জীর কবিতা—
মুখোশ
মানুষ মানুষে মুখোশে বড় সখ্য এই সভ্যতায়
যে মুখোশ মানুষের শয়তানি ঢাকে
সে-ই তো আসলে তার রক্ষাকবচ।
তাই চেনা যায় না মানুষ।
মাঝে মাঝে আতঙ্ক মানুষকে জড়ায়
স্পর্শ, শ্বাস, পানীয় অথবা যৌনতা
দোষ হয়ে হানা দ্যায় পাড়ায় পাড়ায়।
প্রেমিক প্রেমিকা ছোঁয় না এ ওর ঠোঁট
সব উর্দ্ধশ্বাসে ছোটে ।
কোথায় ? জানে না।
মহামারী প্যানডেমিক হয়।
মাঝে মাঝে হানা দ্যায় এমন শমণ
একদিন বেঁচে যায় বটে
ফের তারা ছিঁড়ে ফ্যালে মানববন্ধন।
উদার উদোম হয়ে যায়।
কিন্তু ঠিক জেগে থাকে অন্য সংক্রমণ
দূরত্ব ঠিক থেকে যায়,
মুখোশ এমনই থাকে,
মানুষ মুখোশ খোলে না।
জয়া বসাকের কবিতা--
প্রকৃতির কোলে
পৃথিবীর রূপ খুঁজতে যেও না আর ।
প্রকৃতির কোলে মাথা রেখে শান্তিতে থাকা যাবে না আর।
আপনাকে হ্যাঁ আপনাকেই বলছি,
মনে পড়ে সভ্যতার প্রথম ধাপে কি-ভাবে
প্রকৃতি আমাদেরকে ভালোবেসে ছিল
আর তার বিনিময়ে আমরাও ভালোবেসে ছিলাম
সমানভাবেই প্রকৃতিকে এই ধরণীকে।
কথায় আছে না আমরা যা নেই ঠিক ততটাই ফিরিয়ে দিতে হয়,
কিন্তু এখন মানুষে মানুষে মানবিকতা ভুলে গেছে,
হিংসা- অহংকারে শুধুই নিজের নিজের করে ছুটেই চলেছে ।
থামছে না আর এত কিছুর পরেও।
শুধুই নিজেদের চাহিদা মেটাতে মেটাতে এতটাই ব্যস্ত যে
ভুলেই গিয়েছে প্রকৃতি কেও কিছু ফিরিয়ে দেবার ও আছে ..
হ্যাঁ আমরা শুধু নিয়েই এসেছি প্রকৃতি মায়ের কাছ থেকে,
সমস্তটা কেড়ে, নিংরে ,কেটে ফেলে- হিংস্রতায় ভরিয়ে দিয়েছি তার কোল ।
এত পশুহত্যা, গাছ কাটা, জল অপচয় কিছুই ভাবছি না আমরা,
আর জ্ঞান শূন্য হয়ে পড়েছি দিনে দিনে।
একের পর এক মহামারী ,দাবানল তবুও আমরা শান্ত হচ্ছি না ।
এর পরেও বুঝতে পারছি না,, আমাদের এবার থামতে হবে।
নইলে পৃথিবী এবার -প্রকৃতি এবার তান্ডব নৃত্য দেখাবে
তখন আমাদের আর কিছু করার থাকবে না ।
আজ তাই আমরা ঘরে আর প্রকৃতি পশুপাখি সবাই বাইরে ।
নিজের নিজের কথা ভুলে এবার আবারও এগিয়ে আসতে হবে ।
আবার প্রকৃতিকে ভালোবেসে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে তার প্রাপ্য টুকুকে ।
এবার আমাদেরও পালা প্রকৃতি মাকে একটু শান্তি দিয়ে
আমাদের কোলে মাথা রেখে ঘুম পাড়ানো ,
হাত বুলিয়ে দেওয়া ।
আর খেয়াল রাখতে হবে প্রতিনিয়ত এই সম্পর্ক যেন চিরতরে অটুট থাকে
পশুপাখি ,জল-হাওয়া বন-জঙ্গল -প্রকৃতির সাথে ।
সন্ধ্যা রায়ের কবিতা--
ভালবাসা
ভালোবাসা কনক চাঁপায়
হাসনুহানায় শেফালী তলায়।
পুষ্ট ধানের শীষের ডগায়,
হলুদ সরষে খেতে ঢেউ খেলে যায়,
নীল সাগরের ঢেউয়ের ফেনায়।
উছলে পড়ে ঝর্ণাধারায়,
সাদা মেঘের চন্দ্রকণায়।
ভালোবাসা মুঠোফোনে ঢেউ খেলে যায়--
তালদিঘিতে ভালোবাসা,
গার্ডেনে বা ময়দানেতে আছড়ে পড়ে ভালোবাসা।
ভালোবাসার খাতির অনেক, কদর অনেক,
মাছির মত ভ্যান ভ্যানিয়ে খুঁজছে সবে--
ভোগের মালশা সামনে ধরে,
নিত্যনতুন পাবার আশায়।
তাল পাটালি গুড়ের মত দিবানিশি
চাটছে সবাই এপিঠ-ওপিঠ,
পায় না শুধু যন্ত্রমানব,
এদিকে ওদিক হাতড়ে বেড়ায়।
কাবেরী তালুকদারের কবিতা--
আমার দেশের শিশু
হঠাৎ পেলাম ডাক,
কবিতা এখন থাক।
মিছিলে মেলাতে হবে পা।
মা, এগিয়ে দেন শিশুকে
যা, যা এগিয়ে যা।
কবে এক কবি বলেছিলেন
এই পৃথিবীকে করো
শিশুর বাস যোগ্য।
সে বই হারিয়ে গেছে
দেশের মানুষের মন থেকে।
পৃথিবী, আমার পৃথিবী মেখেছে
আরো কালি আর পাক ।
অবুঝ শিশু, হয়েছে তাই
বড়ো দাদাদের এক একটা হাত।
জানে না সে কিছুই,
বোঝে না সে কিছু,
শুধু যানে, মিছিলে গেলে
তার মিলবে, ডীমের ঝোল আর ভাত।
ফিরবে কখন মায়ের কোলে
তাও যানা নেই, শুধু এটা জানে
ভ্যান রিক্সা পৌছে দেবে যখন,
তখন অনেক রাত।
সকাল হতেই নেবে যাবে
আবার কাগজ কুড়াতে,
আজকের দিনটা ছেলেটা
না হয় পেট ভরে খাক।।
অঞ্জলি চক্রবর্তীর কবিতা--
শুধু ভালবাসা
হাজার মাইল হাঁটলেও ঠিকনা মেলেনা।
হাজার সত্যের মধ্যেও দু একটা ভুল-
বসবাস করে।
অন্তহীন কথা বলা ,পথচলা
এরা সবাই প্রতিবেশী ,
কেউ প্রকৃত আপন নয়।
শুধু ভালোবাসা দিয়েই
যে কোন সম্পর্কের দিকে
হেঁটে যাওয়া যায়।
যেমন জলের সংগে জল;
আর মনের সংগে মন।
অন্য সব দরজার ওপারে।
মহুয়া বিশ্বাসের কবিতা--
মানব রূপ পাখি
নাম না জানা কতই পাখি
কিচিমিচি
স্বরে করে ডাকাডাকি।
বাসা
ভাঙে, বাসা গড়ে --
নিজগুণে
খাসা করে ;
কেউ
বা আবার আলসে কুঁড়ে--
বাসার
খোঁজে ঘুরে ঘুরে
ভিক্ষা
মাঙ্গে পরের ঘরে !
নাম
না জানা কতই মানুষ
আছে
এই পৃথিবীর নীড়ে--
মন্দ-ভালো
, সাদা- কালো
মানব
মেলার ভীড়ে ।
মানব
- পাখির রীতি নীতি
একই
রকম তাদের কৃতি।।
মনীষা করের কবিতা--
চাঁদের মুখ
ঘুমন্ত চাঁদের মুখ অমন করে কি কেউ দেখে বলো ?
আগুন মেখে ঘুমায় সে রাতে...
অসংখ্য কমল ফুটে থাকে
শরীরময় চোখ মুখ ঠোঁট বুক নাভী নিতম্ব
পরাগরেণু মাখামাখি
স্বপ্নে শিহরিত হয় সারারাত
কপাল ঢাকা অবাধ্য মেঘে সরাতে যেওনা...
জেগে গেলে কম্পিত ঠোঁট ছুঁয়ে যাবে
জানিনা কোথায় কোথায় আগুন স্পর্শে পুড়তে হয়
এটুকু শাস্তি সহ্য করতে পারবে তো?
|
জলদিবাজি পাখী
কিছু কিছু বিষন্ন মুখ বড় পীড়া দেয়
নারী শরীরই দুঃখের কারণ
শিকড়হীন ভেসে বেড়ায় মৃত্যু অবধি
কন্যাদান করে পূণ্য কামানোর বড্ড জলদিবাজি
ঠিক মত ফুটে ওঠার আগেই বিসর্জন
তারপরের ইতিহাস দর্দনাক ছা-পোনাগুলোকে
বুকে জড়িয়ে নির্যাতন সয়ে যাও
সয়ে যাও চোখের নিচে কালো দাগ ছাড়া
সে মুখে আর কিছুই ফুটে ওঠেনা...
সান্ত্বনা
চ্যাটার্জির একগুচ্ছ কবিতা--
ঘরভাঙা গান
অংঅং
বার বার কতবার
হয়তো বা নয় ;
ডানা ভাঙা মন পাখি
উড়ে যেতে চাইত ,
সেখানে হৃদয় ।
যেখানে হৃদয় ছিল ফাঁকা সুন সান ,
বন্ধ ঘরে ত্রকা কাঁদে ।
ঘরভাঙা গান ।
ঘরভাঙা গান ভাঙে হৃদয় যখন ;
প্রেমের বিগ্রহ ঝুর ঝুর
ঝরে যায় - সাথে নিয়ে মন,
হৃদসাগরে ভাসায় ।
ঘর কেন ভাঙে মন পাখি কেন উড়ে যায় ;
বার বার বার ;
হয়তো বা নয় !
মন যদি জানতো
কবি জানাতো তোমায়।।
কাব্যকথা
ব্যার্থতা থেকে যোগ্যতা
ব্যার্থ
কেউ চাঁদ চায় ,
তারা পায় ;
কেউ পায়
আলো ।
আমার আকাশ জোরা
কালো ;
অমাবস্যার চাঁদ !
দেখেছ কখোনো !
এসো দেখে যাও ,
হয়তো বা পেয়ে যাবে
যা দেখতে চাও ।
টেবিলে সাজানো খালি ফুলদানি ,
পাশে আছে বই ;
দেয়ালে শোভা পায় অমূল্য ফ্রেম
শিল্পী তুমি কই ?
যোগ্যতা
ওঁ
হয়তো আজ দিনশেষে
অথবা প্রত্যুষে,
মাঠের কিনারে
বা মেঘের মিনারে,
দু হাত বাড়িয়ে থাকবে দাঁড়িয়ে
বলে - তুমি যে আমার ।
তোমাকে ডাকিনা চাইনা আমি
তবু কেন
কেন তবু , ডাকো বার বার
ব্যর্থতা আমার ।
তুমি এস বীর বেশে
ঝড়ের মতন ।
সকল ব্যথর্তার গভীর আঁধার
সরিয়ে এস বুকের মাঝে ,
এস দুজনায়
হৃদয়ে জ্বালাই মশাল ;
হাতে তরোয়ল;
খণ্ড খণ্ড করে যত জঞ্জাল;
চল যাই অগ্নির মত
রুদ্রের মাঝে,
যেখানে শক্তি বিরাজে ।
চুপচাপ
ত্রকটা করে বছর যায়,
চুপচাপ
তাকিয়ে থাকি দূরে,
কাছে ,
কেউ নেই ;
নতুন বছর নতুন পাতা ,
নতুন আশা নতুন লেখা
নতুন নতুন নাম ।
পুরানো নামের তালিকা ও অনেক ।
একটা পাতা একটা আশা,
ঝরে যায় নিভে যায়
চুপচাপ ।
শংকর ব্রহ্মর একগুচ্ছ কবিতা--
মনে পড়ে
মনে পড়ে না, এখন কিছুই মনে পড়ে না
বিস্মৃতির অতলে, সব হারিয়ে গেছে?
আমি তোমার ছোট বেলার খেলার সাথী
মনে পড়ে না, হ্যাংলা প্যাংলা ছেলেটা সেই,
থুতনিতে তার কাঁটা দাগের
সঙ্গে তোমার আড়ি ছিল
বাড়ি ফিরে, কেঁদে ছিলে ইচ্ছে মতো।
কাঁটা দাগের উৎস কোথায় খুঁজতে গিয়ে
মনে কি পড়ে,
আচমকা সেই কামড়ে ধরা
পড়ল মনে, চুমু খাওয়ার শাস্তি দেওয়া?
তারপরে চোখ থুতনি ছেড়ে মাটির দিকে
নেমে এলো লজ্জাবতী লতার
মতো,
হঠাৎ করে, এক ছুটে তাই ঘরে ফেরা।
এসব কথা ভুলতে গিয়ে,
নতুন করে মনে পড়া, মনেকরা।
ছোট্ট বেলার সেই ছেলেটা এখন অনেক, অনেক বড়,
বুড়ো এখন,
অমূল্য সেই দিনগুলো সব,
কোথায় যেন হারিয়ে গেছে,
এসব কথা, জানবে না কেউ, কোনদিনও।
মুক্ত আকাশ
তুমি আমার ভোরের আকাশ,তুমি আমার মুক্তমন
তোমায় পেয়ে ফিরে
পেলাম,ষাট পেরিয়ে নবযৌবন
এখন আমি ফুটতে
থাকি, টগবগিয়ে কবিতায়
জানি তোমার এ'সব কথা,মোটেও জানার কথা নয়
তবু আমি তোমার
কথা,ভাবতে থাকি অনুক্ষণ
সে'সব কথা কেউ না জানুক,জানে আমার সুপ্তমন
তোমায় নিয়ে
কল্পনাতে, কোথায় না আর যাই আমি
আগ্রা,প্যারিস,রোম কিংবা সহস্রবার
বৃন্দাবন।
তুমি আমার স্বপ্ন সাথী,স্বপ্নে আসো যখন চাও
তুমি এ'সব জান না তাই ,জানলে তোমার বাড়ত ভাও
এখনও তোমায় ভাবতে
গেলে,মনে কেমন ঢেউ খেলে
ঢেউয়ের টানে
দুলতে থাকি,মাছের মত পাখ মেলে
দুলতে দুলতে
তোমার কাছে,পৌঁছে তো চাই অনায়াসে
চোখে আমার মুক্ত
আকাশ,স্বপ্নে তোমার মুখ ভাসে।
হৃদয় যখন পোড়ে
চাঁদের আলোয় হৃদয়
যখন পোড়ে
মন টেকে না ঘরে,
বুঝবে তখন
কারও জন্য, হৃদয় কেমন করে,
হয় তো বুঝে জাগতে
পারে পুলক
শুনে, তোমায় দুষবে কিছু কু-লোক।
ভাল মন্দের হিসেব কষে
যায় না রাখা
অন্তরে,
ভাল মন্দ এক হয়ে
যায়
ভালবাসার মন্তরে।
ভালবাসতে মুরদ লাগে না,হৃদয় লাগে,
অধিকার বোধ ফলাতে মুদর লাগে।
জীবনে যন্ত্রণা আছে
প্রেম তবু দুহাত
বাড়ায়,
হৃদয়ের
ক্ষতস্থানে
নীরবে সে প্রলেপ
লাগায়।
অবুঝ অনুরাগে
নিজের সাথে কথা বলি
নিজের পথে একলা
চলি,
জনসভায় গিয়ে
দাঁড়াই
সামনে ঝুঁকে গলা
বাড়াই,
মানুষ নামক জটিল
জীবের
কঠিন মাথা গুনতে
আর রঙ বেরঙের
নানান ভাষণ শুনতে।
ঘরে ফিরে মাথার ভিতর,
কত রকম স্বপ্ন
জাগে,
ভাল লাগে,ভালই লাগে বেশ তো।
মনের ভিতর পুলক
জাগে
নেতার ভাষণ কেমন
যেন পানসে লাগে,
তখন আরশি ভাঙি কঠিন রাগে
রঙিন সব
স্বপ্নগুলো কোথায় যেন ভাগে।
নিজের পথে একলা চলি,
নিজের মনেই কথা
বলি অবুঝ অনুরাগে।
উশ্রী মন্ডলের গুচ্ছ কবিতা--
সূচনা
পুস্প তুমি ফুঁটবেই ,
শাখীর নিমন্ত্রনে....
সুবেশী বসন্তের মদির দেশে !
গন্ধ তুমি বইবেই ,
অনেক সুবাস নিয়ে....
আসবে মধুকর স্নিগ্ধ হেসে !!
ফল তুমি ফলবেই ,
দ্রুমের সৃষ্টিকল্পে....
প্রকৃতির অঙ্গনে বীজ রূপে !
নবীন প্রারম্ভ নিয়েই ,
বৃক্ষের ফসল হয়ে....
সুদৃঢ় উৎপত্তির অভিলাষে !!
পাতা তুমি ঝরবেই ,
মৃত্তিকার আহ্বানে....
ক্ষিতিকে বন্ধ্যাত্ব থেকে রক্ষার্থে !
নতুন আসে পুরাতন গেলেই ,
পর্নিকে ভরবে নন্দিত ধৃতিতে....
পাদপ হর্ষিবে সুখাবেশে !!
তরু দৃঢ় হবেই ,
দৃষ্টি নভোমন্ডলে....
অভিপ্রায় উজ্জ্বল রশ্মির গ্রহণে !
জঠর সন্তুষ্টি চাইবেই ,
প্রতিষ্ঠা পাবেই মহান মহীতে...
জীবন প্রবাহিবে নবছন্দে !!
মুক্তি
শুনতে পাচ্ছ....
কান পেতে শোনো !
কার সকরুন মিনতি শোনা যাচ্ছে,
কে যেন বলছে....
যাসনে....
বেশি দূর উড়ে যাসনে.....
আশেপাশেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত কর !
এই হাতে তো তোকে যত্ন করে,
বড়ো করার আখাঙ্খা পূর্ণ করতে পারবো না ,
শুধু চোখের সম্মুখে থাক,
তোকে বিশাল মহীরুহতে পরিণত হওয়া দেখতে চাই !
ভয় পাশ নে,
ওই মৃত্তিকাকে ভেদ করে তোর
ওই নরম ছোট্ট মূলকে
অনেক অনেক নিচে স্থাপন কর,
ওরে ভবিষ্যতের পাদপ ....
নিজের অস্তিত্ব বজায় রাখতে হলে,
ওই ভূতলকে শক্ত করে আঁকড়িয়ে ধরতে হবে....
হতাশ কিংবা ধৈর্যহারা হয়ে পড়িস না !
একটু অপেক্ষা কর....
একটা জর আসছে তোর দিকে,
মাটিকে খুঁড়ে খুঁড়ে.....
অনেক মমতা ও সাহসকে উপহার হিসাবে
দেবার জন্য !
ওই, দেখ....
সে এসে গেছে,
সে যে তোকে তার সমস্ত ভালবাসা
দিয়ে জড়িয়ে ধরলো....
তাকে অনুভব কর !
সে তোকে সেইখানে নিয়ে যেতে চায়...
যেখানে অনেক রসদ আছে,
যা তোকে বিশাল বিটপীতে পরিণত করবে,
তার পদাঙ্ক অনুসরণ কর !
ওই দ্যাখ...
ওই ঈশান কোণ থেকে....
কৃষ্ণ বর্ণের জলদ ভয়ানক তুফানের রূপ নিয়ে
ধেয়ে আসছে,
পতত্রীকুল কি জানি কি অনাগত বিপদের আশঙ্কায়
নিজ নিজ কুলায় প্রত্যাগমন করছে !
একদম ভয় পাসনে তুই...
তোর ওই ভালোবাসায় পূর্ণ মূলকে
গভীর একটা শক্ত ভূমিতে স্থাপন করে আসা হয়েছে ,
কারোর সাধ্য নেই....
তোকে সেই স্থান থেকে উৎপাটন করতে পারবে !
এসে গেছে....
মহাকালরূপি তুফান,
যে তোর শীষকে বার বার ধাক্কা দিয়ে.....
ওই মৃৎকে স্পর্শ করাচ্ছে,
তুই ধন্য হলি...
ওই ক্ষিতিকে নমন কর !
ওই দেখ অম্বুদেরা ...
পরস্পর পরস্পরের সাথে লড়াইয়ে মত্ত....
ওই ধারাঙ্কুরকে জয় করার জন্য,
ওই স্রোতাধার ভয়ে আতঙ্কে দিশাহারা হয়ে পড়েছে
এই দুর্বৃত্ত জীমূতদের আচরণে,
সে যে ওই বারিদের হাতে এক বন্দিনী রাজকন্যা !
ওই সমীর ....
এক পক্ষীরাজ তুঙ্গের উপর চড়ে
এক বাজিগড়ের মতো ধেয়ে আসছে ...
সে যেন এক অচিন দেশের রাজপুত্র ,
সে তার উন্মুক্ত তলোয়ার নিয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়লো জলধরদের মাঝে,
ভীষণ লড়াই করে....
ওই বৃষ্টিকে মুক্ত করে দিলো,
ওই প্রবহন মুক্তি পেয়ে ঝর ঝর করে
স্রোতা ধারায় নির্গমন হয়ে ধরিত্রীকে সিঁচিত করতে লাগলো !
আঃ !
শরীর জুড়িয়ে গেলো,
দেখ, সারা প্রকৃতি এক আনন্দ উৎসবে মেতে উঠেছে,
আয়রে , সবাই মিলে এই মুক্তিপূর্ণ আনন্দ উৎসব
মেতে ওঠ !
অদৃশ্য
আমি অহল্যার মতো
অভিশপ্ত হয়ে প্রস্তরীভূত হয়ে পড়লাম,
তোমার অহংকারপূর্ণ ভুলে ভরা অভিশাপে l
তাই আজও..
ঐ পাহাড়ের গায়ে খোদিত মূর্তির মতো
আমিও এক খন্ড পাথরে রূপান্তরিত হয়ে পরে আছি,
কিন্তু মুক্তির কোনো উপায় দাওনি l
তাইতো...
আমার কোনো অবয়ব না থাকার কারণে
আমার চোখের ভাষা কিংবা মনের ভাষা
তুমি বুঝতেও পারবেনা কোনোদিন !
জানো
আমার অনেক ইচ্ছে ছিলো,
অনেক চাওয়া পাওয়া ছিলো,
আর ছিলো অফুরান ভালোবাসার ভান্ডার,
যা তোমারই প্রতি সমর্পিত ছিলো l
নিয়তির নিঠুর বিধানে.....
আমি এক অনুভূতি পূর্ণ,
কিন্তু অদৃশ্য এক ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে,
এই শক্ত পাথরে আটকিয়ে গেছি,
এর থেকে মুক্তি নেই !
প্রতিদিন
ঐ শিল্পী স্নিগ্ধ হাওয়ারা,
তাঁদের হাওয়ার হাতুড়ি ও ছেনি নিয়ে
আমাকে কেটে কেটে এক অবয়ব দিচ্ছে,
আস্তে আস্তে.....
আমি একটা রূপ ও শারীরিক কাঠামো পাচ্ছি,
হয়তো আমি অপরূপ এক মূর্তিতে রূপান্তরিত হবো,
কিন্তু প্রাণ, প্রাণ কোথায় পাবো ?
নির্জীব পাথরের মূর্তিতে কে প্রাণ সঞ্চার করবে ?
জানিনা,
কত যুগ ধরে......
আমাকে এই ভাবে অপেক্ষা করে থাকতে হবে,
একদিন হয়তো ছোটো ছোটো অনু পরমাণুতে পরিণত হয়ে যাবো,
তখন কোথায় খুঁজবে আমায়?
তখন না হয়....
ঐ খোলা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখবে ,
যেখানে আমি আমার পরিপূর্ণ ভালোবাসাকে নিয়ে
ঐ মেঘের মধ্যে লীন হয়ে ভেসে চলেছি,
হয়তো বৃষ্টির রূপ ধরে ঝরে পড়বো,
তুমি চিনতে পারবে তো আমায় ?
সুচন্দ্রা বোসের গুচ্ছ কবিতা--
অনুরাগ
প্রেম জাগে না কেন বুঝি না হৃদয়ে তারি
মন জুড়ে থাকে সে এটাই বুঝতে পারি
সেটাই আমি বুক ফুলিয়ে বড়াই করি
পতির ভালবাসার অনুভবেই হৃদয় গড়ি।
কখনো কি সে নারী প্রেমহীনা হয়?
কেন সে তবু বোঝে না আমায়?
অকারণ দুঃখে ,মনে জমে ওঠে কত যাতনা
মনের বেদনায় অভিমানে তবু কাঁদি না।
কারও প্রতি তো প্রেম নেই
পারি না বোঝাতে কিছুতেই
তার প্রতি জাগে মনে রাগ
তবু দেখাই তাকে কত অনুরাগ।
শুধু এটাই ভাবতে পারি,সে আমার মন হরি
আমি অন্য কারও নই,শুধু তারই প্রেয়সী নারী।
ওরা কাজ করে
আমরা আছি যে যার ঘরে
ওরা খেটে মরে মাঠে প্রান্তরে,
ভয় নেই কোন তাদের মনে
অসময়ে খাটে জনে জনে।
সুখি পৃথিবী আসবে ফিরে
স্বপ্ন সাজাবে সবুজ ঘিরে,
ওরা যে নতুন দেশ গড়ে
খোঁজ রাখে না কেউ ওরে।
কেউ রাখি না ওদের খোঁজ।
ভাবি না ওরা কি খাবে রোজ?
ওরা আজও মাঠে প্রান্তরে
রোদ মেখে গায় কাজ করে।
স্বপ্নে ভেসে থাকব
তুমি তো জানো ,
আমরা কী এক ভয়ঙ্কর সময়ের মধ্যে দিন
যাপন করছি
শুধু অপেক্ষা আর ভাবছি
আগের মত করে নিয়মিত আমাদের ফোনে যোগাযোগ হয় না।
আমরা কবে যে এই কঠিন সময় অতিক্রম করবো জানি না।
আবার কি কখনও যোগাযোগ হবে নতুন করে
কথায় শুধু গলাটা ভাঙা ভাঙ স্বরে
থেমে যাবে বহুদিন পরে?
গাইছে পাখি আপন সুরে
সেই যেখানে দেখা হতো তোমার সাথে স্টেশনে
হয়তো আর দেখা হবে না দুজনে
সময় এগিয়ে যাবেই তার নিয়মে
আর বয়সটাও বেড়ে যাবে আমাদের ক্রমে ক্রমে
হয়তো হঠাৎ দেখা হবে
সেদিন কি সেই টান আর থাকবে?
অন্তরের টানেই হয়তো ছুটে যাবো ।
দুজনেই পড়ন্ত বিকেলের রোদ দেখব
বলিরেখায় দুজনেই নজর কাড়ব
দুজনেই খুব উল্লাসে হাসব
বলব জানো তোমাকে কেমন অচেনা লাগছে
বলতো তোমার মন কি বলছে?
তুমিও বলবে কী গো এ'কদিনেই চোখের মাথা খেলে নাকি ?
আমি বলব জীবনের এখনও অনেকটা পথ যে বাকী
দীর্ঘদিন পরে চোখে চোখ রেখে শুধু নীরবে তাকিয়ে থাকব
বলব জীবনের বাকি পথটা শুধু নীরবে দুজনেই
স্বপ্নে না হয় ভাসব
শমিত কর্মকারের কবিতা--
অন্য অনুভুতি
এমন একটা দিন কখনো আসবে ভাবিনি।
রাস্তায় কমেছে মানুষ কমেছে দূষণ।
শুনসান রাস্তায় নিশ্চিন্তে ঘুরছে জীব।
পাখিরা পেয়েছে প্রান গলা ছেড়ে করছে গান।
ভাবিনি কখনো এমন একটা দিন আসবে!
মানুষ হয়েও ভুলে গেছি সব একি প্রকৃতি প্রেমের লিলা।
এ কোন বিষ ঢেলে দিলে আজ মানব কূলে---
ভুলে গেছি সব নিজেকে করেছি গৃহবন্দী।
ভালো লাগে না আর
এখন আর কোন কিছু ভালো লাগে না---
বলতে পারিনা ওদের তোদের ভালো লাগে না।
সবাই যেন আজ পাল্টে গেছে আর ভালো লাগে না।
ভাবি এক হচ্ছে অন্য একোন লীলা খেলা।
প্রাত ভ্রমন টাও যেন এখন অন্য রকম আর ভালো লাগে না।
আমরা করছি না যতো দেখাতে ততো ব্যাস্ত ভালো লাগে না।
তবুও থাকতে হবে এই পরিবেশ আর পরিস্থিতিতে।
তাই শুধু একা একই চলা ভালো লাগে না।
এ কেমন তুমি
একটা সত্যি কারের তুমি চাই!
পারবে কি সেই তুমি হতে?
কোন ছলনা নয় কোন ভনিতা নয় শুধু তুমি।
পরবে কি সেই তুমি হতে অপেক্ষায় আছি!
এই সমাজ পরিবেশের কাছে
সত্যি কারের তুমি হয় তো বিরল।
তবুও আমি সত্যিই সত্যি কারের তুমি চাই!
তাপসকিরণ রায়ের একগুচ্ছ কবিতা--
কতগুলো মানুষ
কতগুলো মানুষ হাততালি দিয়ে যাচ্ছে
কতগুলো মানুষ পায়রা হয়ে উড়ে যাচ্ছে
কতগুলো মানুষ সাঁতারের আনন্দে জল ছিটিয়ে যাচ্ছে
এক ফাগুন সরে গেলে ফুল্লরার বারোমাস্যা শুরু হয়
অগাধ দুপুরের বাসিভাত ভিজে যাচ্ছে
আধ কাঁচা লঙ্কায় গলার স্বর বেরিয়ে আসছে
সে সুখদ হরিণের শব্দ শোনে নিষাদ
তীরের ফলায় যে বিষ মিশে ছিল
তার ছেঁটা স্বাদে তার মুখও ছুঁয়ে যায়
রাতের আগুন কুন্ডে পোড়া মাংস ও
ফাটা কম্বলের মাঝখান থেকে কি দুঃখ কি সুখ
আপাতত বোধের বাইরে থেকে যায় সব কিছ--
আমরা হেসে যাচ্ছি দেখো, অনবরত হেসে যাচ্ছি।
পকেট
কিছু জল নিয়ে কেলি করি
পতিত ছায়াগুলি জল্পিত কেঁপে ওঠে
ছায়াছবি তুমি এঁকেছ
উড়ে গেলে একটা বুক পট
পকেট খুলে আমি যা যা পেতে পারি
তার কল্পনায় একটা প্রেম পত্র ধরে নিই।
লালমাটি
ধূলির মাঝে শান্তি নিকেতন হলে লাল মাটির কথা বলি
হাঁসুলির বাঁকে রোদ্দুরের গাঢ় ছায়া
তীব্রতায় তোমার তখন তামারঙ।
আদল
ছায়া উপছায়াগুলি উড়ে যাচ্ছে পাখির আদল
সীমান্ত তোমার নেই
মিসাইলের বুকে আকাশ যন্ত্রণা
আগুনে ভরা আছে হিংস্রতা
তুমি শান্ত বসে আছো, আকাশ নিয়ন্ত্রণের মুখে
ভ্রংশ লক্ষ্যস্থলের ত্রুটিগুলি
একত্রিত করে আগামীর সাজানো।
ছবি
তবুও ছবি।
তুমি আমার মত রাত্রি আঁকো
শুধু অন্ধকার দেখি
আগামী আলোয় তোমার কথা অক্ষরিত হল
যখন আঁধার তখন সবকিছু দেখতে পাই
তোমার হাত পা ও পায়ুরেখা জড়িয়ে
আসলে তোমার চোখেই তো আলো আছে
রাতের আগুন নিয়ে তুমি লুকিয়ে আছো
আগুনে তুমি বীজ বোনো
হাওয়ায় উড়ছে নিরক্ষর ঘুণ
তখনও কাঠামোয় জড়ানো হয় নি রক্ত মাংস ভ্রূণ।
অভিমান
বেখেয়ালি পাসবালিশটা
কবে থেকে প্রণয়ে পড়েছিল, আমি তা জানি না।
আমার প্রেমিকাকে দেখে সে পাশ ফিরে পড়ে রলো।
কখনও এমন হয়, অভিমান বুঝে নেওয়া যায় না,
তোমার অব্যক্ত মুখ পড়তে পারিনি,
অথচ তোমার তোরঙ্গে নাকি
আমায় লেখা অজস্র চিঠির গুচ্ছ রাখা ছিল !
আমি তা জানতে পারিনি।
আজ প্রেমের বিছানায় এসে যখন তুমি
ছড়িয়ে দিলে তোমার ব্যক্ত মুহূর্ত--
সেই চিঠিগুলি থেকে ক্রমশ ভালোবাসার
জন্ম নিতে নিতে আমি তোমায় আরও কাছে
টেনে নেই।
এক বারও ভাবিনি সে পাশবালিশের কথা,
যাকে এত দিন আদরে সোহাগে জড়িয়ে ঘুমিয়েছি
সে এখন পালঙ্কের ধার ঘেঁষে
অভিমান ভরে শুয়ে আছে।
বন্দী
রৌদ্র গলা একটা জানালার গারদে আটকে আছি
ওদিকে তোমরা আমায় কেয়িদী বলেতই পােরা
অথচ আমি চিৎকার কের বলিছ, আমি না,
আমি তোমাদের বন্দীদশা দেখি।
|